ছাতক (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ সুনামগঞ্জের ছাতকে জাল জালিয়াতি করে অর্থের বিনিময়ে একটি উত্তরাধিকারি সনদ তৈরির অভিযোগ উঠেছে। ভূয়া তথ্যের ভিত্তিতে সনদ তৈরি করে নামজারির মাধ্যমে প্রতিপক্ষের মৌরশি ও ক্রয়কৃত ভূমি জোর পূর্বক দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে একটি ভূমি খেকো চক্র। আদালতে মামলা দায়ের করে প্রতিকার পাচ্ছেনা বাদি ও তার পরিবার। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়ারা।
মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ছৈলা-আফজলাবাদ ইউনিয়নের কৃঞ্চনগর গ্রামের হাসমত উল্লাহ মৃত্যুবরণের পর তার ত্যাজ্যবিত্তে উত্তরাধিকারি সনদ অনুযায়ী তিন ছেলে রজিব উল্লাহ, রিয়াজ উদ্দিন, রিয়াছত আলী ও দুই কন্যা আলকুমা বিবি এবং ফজর বিবি। এদের মধ্যে একমাত্র আলকুমা বিবি নি:সন্তান হিসেবে মারা যান। এই তথ্যের ভিত্তিতে ২০১৮ সালে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গয়াছ আহমদ একটি উত্তরাধিকারি সনদ দেন। এদিকে, ২০২৪ সালে মৃত আকবর আলীর স্ত্রী মৃত আলকুমা বিবির একমাত্র ছেলে মছদ্দর আলী উল্লেখ করে স্থানীয় ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান আজাদ মিয়া ও ইউপি সদস্য জহির আলী উত্তরাধিকারি সনদ প্রদান করেন। ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক দেওয়া উত্তরাধিকারি সনদে মৃত আলকুমা বিবিকে নি:সন্তান ও এক সন্তান আছে মর্মে একি বিষয়ে পৃথক দুটি সনদ প্রদান করা হয়।
নি:সন্তানকে সন্তান আছে দেখিয়ে আলকুমা বিবির উত্তরাধিকারির ভূয়া সনদ গ্রহণ করে একই গ্রামের মৃত আফতাব উদ্দিনের ছেলে কামাল উদ্দিনরা।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আজাদ মিয়া ও ইউপি সদস্য জহির আলীকে অভিযুক্ত করে সম্প্রতি সুনামগঞ্জ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন, কৃঞ্চনগর গ্রামের মৃত মোশারফ আলীর ছেলে মাহবু্ুবুর রহমান।
দায়েরি মামলায় নাম উল্লেখিত অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন, কৃঞ্চনগর গ্রামের মৃত আফতাব উদ্দিনের ছেলে কামাল উদ্দিন, ইমাম উদ্দিন, কন্যা আফরোজা বেগম ও নুরেছা বেগম, মোহনপুর মৈশব গ্রামের মৃত জোয়াদ উল্লার ছেলে ফজর আলী ও আবদুল মতিন। মামলাটি তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ।
ভূয়া ও জাল উত্তরাধিকারি সনদ ব্যবহার করে প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের যোগসাজশে আসামিরা তাদের নামে পৃথক নামজারি ২৫-২২০২ খতিয়ান সৃজন করে বাদি পক্ষের ভূমি দখল করার পায়তারা করছে। এসএ ৬৬৫ খতিয়ানে ৯৫৭৭, ৯৫৮২, ৯৫৯৪ দাগে ০.১১৭৪ একর ভূমি নিজেদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ভূমি বলেও দাবি তুলছে। মূলত তাদের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই কোনদিনও ভোগ দখলে ছিলনা বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। অপরদিকে, আসামিদের ভয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন বাদি ও তার পরিবার। ভূমিতে গেলে প্রতিপক্ষের লোকজনরা অশ্লিল ভাষায় গালাগাল করে। প্রতিবাদ করায় প্রাণে মারার চেষ্টা করে। এ বিষয়েও আদালতে ৭জনের নামে একটি পিটিশন দায়ের করেন মাহবুবুর রহমান। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে চলছে উত্তেজনা। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে।
অভিযুক্ত কামাল উদ্দিন বলেন, আলকুমা বিবির ছেলে আছদ্দর আলীর উত্তরাধিকারি সূত্রে তারা ভূমির মালিক। মামলার বাদির মামা মাওলানা মইজ উদ্দিন বলেন, তার ফুফু আলকুমা বিবি নি:সন্তান ছিলেন। তাকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল সিলেটের শিবেরবাজার মানসিনগর এলাকায়। তার স্বামীর নাম আকবর আলী। এখন নি:সন্তানকে সন্তান সাজিয়ে ইউপি সদস্য জহির আলী ও প্যানেল চেয়ারম্যান আজাদ মিয়া কর্তৃক একটি উত্তরাধিকারি সনদ প্রদান করেন কামাল উদ্দিনদেরকে। আমাদের গ্রামেও একজন আকবর আলী ছিলেন। ওই আকবর আলীর স্ত্রী সাজিয়ে মছদ্দর আলীকে সন্তান দেখিয়ে ভয়াবহ এ জালিয়াতির মাধ্যমে দূর্নীতি ও হয়রানি করা হচ্ছে।
ইউপি সদস্য ও মামলার আসামি জহির আলী তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ২০১৮ সালে আমার তথ্য ও স্বাক্ষর ছাড়া ইউপি চেয়ারম্যান গয়াছ আহমদ আলকুমা বিবি নি:সন্তান হিসেবে উত্তরাধিকারি সনদ দিয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েতের বৈঠক হয়। বৈঠকে মনছর আলী, সমর আলী, আলী আশরাফ তাহিদ, তরিক উল্লাহ, আবদুর রহমান, নসিব উল্লাহসহ অনেকেই ছিলেন। মৃত আকবর আলী ও তার স্ত্রী মৃত আলকুমা বিবির সন্তান মছদ্দর আলী, তারা কৃঞ্চনগর গ্রামের বাসিন্দা মর্মে ইউপি চেয়ারম্যান বরাবরে একটি ঘোষণাপত্র লিপিবদ্ধ হয়। এর আলোকে তার সন্তান আছে মর্মে তিনি উত্তরাধিকারি সনদ দিয়েছেন। তবে এই বৈঠকে মাওলানা মইজ উদ্দিন পক্ষের কেউ ছিলেন না বলে স্বীকার করেন। ঘোষণাপত্র লিপিবদ্ধ নামক বৈঠকে সাবেক মেম্বার আলী আশরাফ তাহিদ উপস্থিত ছিলেন না এবং কোন কাগজে তিনি স্বাক্ষর করেন নি বলে জানিয়েছেন।
ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান আজাদ মিয়া বলেন, ২০১৮ সালের উত্তরাধিকারি সনদ প্রদানের বিষয়ে তার জানা নেই। তবে সম্প্রতি ওয়ার্ড মেম্বার জহির আলী বলেছেন তাই তিনি ওই সনদে স্বাক্ষর করেছেন।